আমাদের সামনে উপস্থিত বরকতময় মাস, মাহে রামাদান

বিসমিল্লাহি্র রাহমানির রাহীম 
 আলহামদুলিল্লাহ্‌ বছর ঘুরে আবার আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে বরকতময় মাস, রামাদান। আমরা অনেকেই আছি যারা প্রতি বার অনেক কিছুই করার কথা ভাবি, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সেসব আর করা হয়ে উঠে না। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আগমনে মানুষের প্রস্তুতি হয় জাকজমক পূর্ণ। মাসাধিককাল পূর্বেই শুরু হয় প্রস্তুতি। পূর্ণ সময়ব্যাপী চলতে থাকে নানা আয়োজন। ব্যক্তি যত গুরুত্বপূর্ণ হন তার আগমনপূর্ব প্রস্তুতিও হয় তত গুরুত্ববহ। শুধু ব্যক্তি কেন, সামাজিক কোনো গুরুত্বপূর্ণ পর্ব-প্রবচন বা অনুষ্ঠান নিকটবর্তী হতে শুরু করলে তা বরণের জন্য সমাজের মানুষ সর্বতভাবে নানা আয়োজন করে সে উপলক্ষে। দীর্ঘ সময়কাল যাবত প্রস্তুতি গ্রহণ করে সেটি উদযাপন করার জন্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার সৃষ্টিকর্তা। তিনি মহামহিম। মহান তাঁর বাণী। মহাগ্রন্থ পবিত্র আলকুরআনই তাঁর বাণী। যে মাসে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে মাসটিও মহিমান্বিত। সে মাসের একটি রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা মূল্যবান। ওই রজনীটি পাবার আশায় মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) রমজান মাসের পক্ষকালের অধিক সময় মসজিদে ইতিকাফ করেছেন। শেষ বয়সে করেছেন এক দশক। পবিত্র কুরানের কারণেই রমজানুল মুবারকের এত মূল্য। রামাদানের প্রস্তুতির জন্য সহজ ট্রিপস https://onlinegreentree.blogspot.com *** রামাদানে বা হজ্জের সময় ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় কেন সালাতে মনোযোগ দিতে কষ্ট হয় কিংবা কেন আমাদের ঈমান দুর্বল থাকে তা ভেবে আপনি কি কখনো বিষ্মিত হয়েছেন? এর কারণ হতে পারে, সচরাচর আমরা সাধারণত একটি ফোনালাপের পরপরই তাকবীরে চলে যাই কিংবা অন্য আর সবার মতোই আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হই, যা আমাদের প্রকৃত অনুভূতি নয়। আমাদের অনেকেই খুব সাধারণ জীবন যাপন করি, আর অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ভর করে আসন্ন কোন ঘটনার উপর, উদাহরণস্বরূপঃ ‘রামাদান শুরু হলেই আমি প্রতিদিন এক পাতা কুর’আন তিলাওয়াত করবো; হজ্জ থেকে ফিরেই আমি প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করবো; আমার সন্তান জন্মলাভ করলেই আমি ধুমপান ছেড়ে দিব।’ আর এ ধরনের চিন্তাভাবনার কারণেই সাধারণত আমাদের প্রাপ্ত ফলাফল হয় সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা ধুমপান ছাড়তে পারি না, নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারি না, আর কুর’আন তিলাওয়াত শুরু করলেও কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ পর আমরা আবার আমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাই। কারণ, আমাদের এই ‘সংকল্প’ কিংবা ‘অনুভূতিগুলো’ আবেগ কিংবা ঝোঁকের কারণে সৃষ্ট; প্রকৃত চিন্তাভাবনার ফসল নয়। সাধারণত রামাদান কিংবা হজ্জের জন্য আমাদের কোন প্রস্তুতি থাকে না, যা আমাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করতে পারে; অন্য সবাই যা করে আমরাও তা করি এবং আশা করি আমাদের ঈমান বেড়ে যাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন কিছু ঘটে না। https://onlinegreentree.blogspot.com আপনি কি চান না আপনার রামাদান শুরু হোক অত্যন্ত ভালোভাবে এবং রামাদানের এই সুন্দর প্রভাব স্থায়ীভাবে বিরাজ করুক আপনার জীবনে? তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব? আসুন জেনে নেই…এখানে বর্ণনা করা হলো যা রামাদানের একটি স্থায়ী ফলাফল পেতে ইনশা আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবে– একটি রমাদান ‘কাউন্ট ডাউন’ তৈরি করুন: রামাদানের দিন গণনা (মনে মনে কিংবা ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে) আপনার মনে এবং আপনার চারপাশে থাকা মানুষদের মাঝে সৃষ্টি করবে এক উম্মাদনা এবং গুঞ্জন। যখন আপনি এবং আপনার বন্ধুরা একই কর্মসূচীর জন্য দিন গুণতে থাকবেন তখন তা আপনাদের প্রতিদিনকার কথাবার্তা ও আনন্দ ভাগাভাগির অংশে পরিণত হবে। ***রামাদান সম্পর্কে জ্ঞান অন্বেষণ করুনঃ এটা আপনাকে রামাদানের ইবাদাতসমূহ সঠিক ও পূর্ণভাবে পালনের নিশ্চয়তা দিবে এবং আপনার মাঝে রামাদানের অনুপ্রেরণামূলক দিক ও কাজগুলো সম্পর্কে এক উম্মাদনার সৃষ্টি করবে। রামাদান সম্পর্কে আপনি যতো বেশি জানবেন ততো বেশি ইবাদাত করে আপনার প্রতিদানকে বহুগুণে বাড়িয়ে নিতে পারবেন। https://onlinegreentree.blogspot.com ***রামাদানের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন: হতে পারে এটা সম্পূর্ণ কুর’আন খতম দেয়া, নিয়মিত তারাওয়ীর সালাত আদায় করা কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের ইফতারে আমন্ত্রণ করা; প্রথমে এই রামাদানে আপনি কোন ইবাদাতগুলো করতে চান তার একটি তালিকা তৈরি করুন, তারপর পরিকল্পনা করুন সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনার পরিকল্পনাগুলো যেন বাস্তবসম্মত হয় এবং সেগুলো যাতে আপনার স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় কোন ব্যাঘাত না ঘটায় (উদাহরণস্বরূপ, এমন কোন পরিকল্পনা না করা যাতে আপনাকে পুরো এক মাস ছুটি নিতে হয় কিংবা কাজের সময় পরিবর্তন করতে হয়), তাহলে রামাদানের পরেও আপনি এই ইবাদাতগুলো চালিয়ে যেতে পারবেন ইনশা আল্লাহ। এই রামাদানে আপনি কী অর্জন করতে চান তা জানা থাকলে লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারে আপনি অবিচল থাকতে পারবেন। রামাদানে প্রতিদিন রাতে পরবর্তী দিনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করুন (চেষ্টা করুন রামাদানের পরেও এই অভ্যাসটি চালিয়ে যেতে)। https://onlinegreentree.blogspot.com ***নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন হোন: রামাদানে কিংবা রামাদানের পরপরই ঘটতে পারে এমন কোন বিষয়ের ব্যাপারে সচেতন হোন। রামাদানের মধ্যে কি আপনার পরীক্ষা আছে? কিংবা রামাদানের পরপরই কোন বিয়ের অনুষ্ঠান? অথবা বাসা বদলানো? যদি এ ধরনের কোন কর্মসূচী থেকে থাকে তবে এখন থেকেই সেগুলোর ব্যাপারে পরিকল্পনা করুন। এখন থেকেই পড়তে থাকুন, তাহলে রামাদান শুরুর আগেই আপনার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। সবকিছু গুছিয়ে নিন এবং রামাদান শুরুর আগে কিংবা পরে বাসা বদলানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, যাতে তা আপনার ইবাদাতের সময় কেড়ে না নেয়। সর্বশেষ আপনার যে কাজটি করার সম্ভাবনা আছে তা হলো রামাদানে শপিং সেন্টারে ঘুরে সময় অপচয় করা। তাই ঈদ কিংবা বিয়ের কেনাকাটা রামাদানের আগেই সেরে ফেলুন। https://onlinegreentree.blogspot.com ***আধ্যাত্মিকভাবে তৈরি হোন: আমরা সবাই জানি রামাদান হচ্ছে সিয়াম পালন, সালাত আদায়, কুর’আন তিলাওয়াত এবং সাদাকাহ (দান) করার মাস। রামাদানের ঠিক প্রথম দিনটির জন্য বসে না থেকে এখন থেকেই এই ইবাদাতগুলো করা শুরু করুন। এখন থেকেই নফল সালাত, কুর’আন তিলাওয়াত, মানুষের প্রতি উদারতা প্রদর্শন প্রভৃতি ইবাদাতসহ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ সমূহ অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। আর শাবান মাসে নফল সিয়াম পালনের কথা ভুলবেন না কিন্তু। https://onlinegreentree.blogspot.com ***আপনার মনকে প্রস্তুত করুন: সাওম হচ্ছে আমরা আমাদের মুখের মাধ্যমে যা কিছু গ্রহণ বা বর্জন করি তা থেকে বিরত থাকা। এখন থেকেই সংযমের চেষ্টা করুন, বিশেষ করে আপনার কথোপকথনের ব্যাপারে। পরনিন্দা, পরচর্চা কিংবা সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে বিরত থাকুন। https://onlinegreentree.blogspot.com *** বদ অভ্যাসগুলোকে বলুন ‘শুভ বিদায়’: নিজের বদ অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করুন এবং রামাদানের জন্য বসে না থেকে এখন থেকেই সেগুলো ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। আপনার যদি দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে, তবে এখন থেকেই তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করুন; আপনি যদি ফেসবুক আসক্ত হোন তবে এখন থেকেই ফেসবুক কম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন; কফির প্রতি খুব দুর্বল? তবে এখন থেকেই তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। আমরা সবাই জানি কোন কিছু বলা খুব সহজ কিন্তু করা কঠিন। তবে আপনি যদি একবার শুরু করেন এবং আপনার নিয়্যাহ যদি বিশুদ্ধ থাকে তবে দু’আর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। ইনশা আল্লাহ আপনি যতটা কষ্ট হবে ভেবেছিলেন তার চেয়ে অনেক সহজেই আপনার বদ অভ্যাসগুলো ছেড়ে দিতে পারবেন। *** নিজের জীবনকে ইবাদাতের উপযোগী করে পরিকল্পনা করুন: সলাতের সময় কাজ কিংবা মিটিংয়ের আয়োজন না করে অন্য সময় করুন, যাতে সলাতের জন্য আপনার কিছু সময় বিরতি থাকে। আপনি যেখানে সলাত আদায় করেন সেখানে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং দুনিয়ার কথা ভুলে যান, কারণ সলাতের মাধ্যমে আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়াচ্ছেন। আশা করি এই টি যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আপনারা সকলেই রামাদানে সামান্য হলেও উপকৃত হবেন। সমাহীন গুরুত্ববহ ও মাহমূল্যবান এই মাসের প্রস্তুতিকল্পে প্রিয় নবিজী (সা.) রমজানুল মুবারক পূর্ব মাসটিতে লাগাতার সিয়াম পালন করতেন। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) (রমজান মাস ব্যতীত) শাবান মাসেই সব চেয়ে বেশি রোজা রাখতেন। (নাসাঈ: ২১১৭) এ ছিলো রমজান উপলক্ষে রাসুল্লাহ (সা.) এর করণীয় একটি আমল। রমজান মাসের প্রস্তুতিকল্পে প্রিয় নবিজী (সা.) এর একটি মৌখিক আমলও ছিলো। রজব মাস শুরু হলে তিনি সেটি করতেন। সেটি একটি দুয়া। রজব-শাবান এই দু’মাস প্রিয় নবিজী (সা.) দুয়াটি বার বার পড়তেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রজব মাস শুরু হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) (দুয়ার মধ্যে) বলতেন,  ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগ্না রামাদান’। (মিশকাত: ১/৩০৬)অর্থাত: ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদেরকে বরকতদানে ধন্য করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের আয়ু দীর্ঘায়িত করুন”। আমরাও মহিমান্বিত মাস রমজানের আগমান পূর্ব দুই মাস রজব ও শাবান মাসে  ছোট্ট এই দুয়াটি পড়ে প্রিয় নবিজী (সা.) এর অনুসরণ করে ধন্য হতে পরি। না, এর জন্য বিশেষ কোনো জায়গা বা সময়ের দরকার নেই। পথ চলতে, ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়েও আমরা নিজের সময়গুলোকে মূল্যবান করতে পারি। অযথা সময়গুলোকে নষ্ট না করে মহিমান্বিত মাসের প্রস্তুতি হিসেবে কাজে লাগাতে পারি। আসুন একটু চেষ্টা করে দেখি। রামাদানে আমাদের করণীয় কার্যাবলী কে মাথায় রেখে এ মাসের প্ল্যানিং কে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। ১) পরিচ্ছন্নতা ২) ইবাদত ৩) দোয়া এবং ৪) সামাজিক দায়িত্ব। **** পরিচ্ছন্নতাঃ ক) গৃহ পরিষ্কারকরণ- প্রথমেই নজর দেই বাসা পরিষ্কারের দিকে কারণ রামাদান আসার আগেই আমি যদি একটা ব্যাপক পরিষ্কার অভিযান চালাই তাহলে রামাদানে আসল কাজের দিকে মনোযোগ দেওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আর এটা তো আমরা সবাই জানি পরিষ্কার ঘর মানে সুস্বাস্থ্য আর মনও ভাল থাকা। খ) আত্মা পরিশুদ্ধিকরণ- এবার প্রয়োজন আত্মিক পরিচ্ছন্নতা অভিযান, যা শুরু হয় তাকওয়া বাড়ানোর মাধ্যমে এবং এরই সাথে নিজের ভুলগুলো উপলব্ধির মাধ্যমে। তাই আত্মিক পরিচ্ছন্নতার জন্য আমাদের রামাদানের আগে বেশি করে আল্লাহর কাছে সাহায্য আর ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে যাতে করে শক্ত তাকওয়ার সাথে আমরা আমাদের রামাদান মাস শুরু করতে পারি। গ)সামাজিক পরিচ্ছন্নতা অভিযান- এরপরের কাজ হল সামাজিক ভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো। রামাদানের দুই একদিন আগে থেকেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে সামাজিক কিছু কাজ যেন আমরা বাদ দিতে পারি। * যেমন অহেতুক গল্প না করা। কারণ অহেতুক গল্পের বেশিরভাগ বিষয় হিসেবে থাকে গীবত অথবা দুনিয়া সম্পর্কিত বিষয়বস্তু। * সময়ের অপচয় না করা; কারণ সময় এমন একটা জিনিস যা হারালে আর ফিরে পাওয়া যায় না এবং এই জন্য শয়তানও সবসময় ব্যস্ত থাকে আমাদেরকে দিয়ে সময়কে অপচয় করানোর জন্য। সময়ের অপচয় স্বরূপ আমরা যা করে থাকি তা হল অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার করা, TV দেখা, অযথা বসে থাকা এমন অনেক কিছু। রামাদানে শয়তান বন্দি থাকলেও আমরা ঠিকই আমাদের অভ্যাসের দাস হিসেবে অথবা নিজের নফসের কাছে পরাজিত হয়ে সময়ের অপচয় করেই যাই। নফসের কাছে পরাজিত হয়ে রামাদানে রোযা রেখে এমন কিছুই করা উচিত নয় যা আমাদের Ramadaan Reward কে কমিয়ে দেয়। আপনাদের কি মনে হয় টিভি দেখার মাধ্যমে অথবা অহেতুক গল্প করার মাধ্যমে কি আমার রামাদানের Reward বাড়বে নাকি কমে যাবে? ২) ইবাদতঃ এবার আসি ইবাদতের প্রস্তুতিতে। আমাদের প্রস্তুতি এমন হতে হবে যেন এটাই আমার শেষ রামাদান। কারণ আমরা কেউ জানিনা পরবর্তী রামাদান আমরা পাবো কিনা। ঠিক তেমনি আশেপাশে তাকালে হয়ত আমরা দেখতে পাব গত রামাদানেও আমাদের পাশে ছিল এমন মানুষ হয়তো এই রামাদানে আর বেঁচে নেই। তাই প্রস্তুতি এমন হওয়া উচিত যেন নিজের আমলনামায় যোগ করার মত কিছু কাজ আমরা করতে পারি। এই জন্য আমাদের লিস্ট করতে হবে কি কি ইবাদত আমরা করব এবং সাথে এটাও খেয়াল রাখতে হবে দু’একদিন পর পর লিস্ট চেক করে নিজেকে ঠিক করে নেওয়া। আর এই ইবাদত করার প্র্যাক্টিস শুরু করতে হবে রামাদানের আগেই যাতে রামাদানের শুরু থেকেই আমরা সফল ভাবে করতে পারি। এক্ষেত্রে হতে পারে আমি নিজে করিনা এমন কোন ইবাদত শুরু করলাম (যেমন হয়ত আমি কুরআন পড়ি না বা পড়তে পারিনা তাহলে আমি তাই শুরু করতে পারি; অথবা আমার হয়ত কখনই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া হয়নি আমি নাহয় তাই শুরু করলাম) অথবা আমি যেই ইবাদত গুলো করি তার আরো উন্নতি করলাম। এটা হতে পারে আমরা নামাজে আরো মনোযোগী হতে পারি। যেমন সূরা ফাতিহা পড়ার সময় আরো মনোযোগী হওয়া; কারণ এই সূরা ফাতিহার প্রথম অংশ হল আল্লাহর প্রশংসা বা আল্লাহকে সম্মান জানানো আর শেষ অংশ হল মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। আর আমরা অনেকেই জানি না আমরা যখন নামাজে সূরা ফাতিহা পড়ি, মহান আল্লাহতায়ালা তখন প্রতিটা আয়াতের জবাব দেন (হাদীসে কুদসীতে আছে)। তাই আমাদের উচিত সূরা ফাতিহা সময় নিয়ে পড়া এবং প্রতিটা আয়াতের পর একটু থামা। তেমনি ভাবে আমরা চেষ্টা করতে পারি নামাজে পড়া প্রতিটা শব্দের বাংলা অর্থ জানার চেষ্টা করা। আবার ইবাদতে লিস্টে প্রতিদিন কুরআন পড়ার ব্যাপারটাও রাখা উচিত। হোক সেটা এক আয়াত অথবা এক রুকু; কিন্তু আমাদের চেষ্টা থাকবে আমরা যেন প্রতিদিন কুরআন পড়ার অভ্যাস করতে পারি। অন্যান্য সময়ে কুরআন পড়ার যে সওয়াব তার চেয়ে অনেক গুন বেশী সওয়াব রামাদানে পড়ার মধ্যে। এই সওয়াব হল প্রতিটা হরফ উচ্চারণের জন্য, আলহামদুলিল্লাহ্‌। আমরা আরও একটা কাজ করতে পারি আর তা হল আমরা বাসার লোকজন মিলে সূরা মুখস্থ করার প্রতিযোগিতা দিতে পারি। আমরা পরিবারের সদস্যরা মিলে যার যার নিজের সাধ্যমত ২/৩ টা সূরা ঠিক করে তাজবীদ সহ মুখস্থ করতে পারি। অথবা আমরা আল্লাহর ৯৯টা নাম শিখতে পারি। আবু হুরাইরাহ্‌ রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্‌ তা’আলার রয়েছে নিরানব্বইটি নাম, একশো থেকে একটি কম, যে এই নামগুলি মনে রাখবে, বুঝবে এবং উপলব্ধি করবে, সে জান্নাহ -তে যাবে।” [বুখারি ৩.৫০:৮৯৪, মুসলিম ৩৫:৬৪৭৬, আত-তিরমধি ৫১.৮৭:৫১৩৮] আমাদের মহানবীর (সাঃ) অনেক সুন্নাহ আছে যা হয়ত আমরা পালন করি না। এই রামাদানে আমরা চাইলে যেকোন একটা সুন্নাহ ঠিক করতে পারি যা আমরা আগে পালন করি নাই কিন্তু এখন থেকে পালনের চেষ্টা শুরু করতে পারি। এমন অনেক উপায় আছে যেভাবে আমরা আমাদের ইবাদতকে আরও সুন্দর করতে পারি অথবা আগে করিনি এমন ইবাদত অথবা সুন্নাহ্ এর প্র্যাকটিস করতে পারি। ৩) দোয়াঃ আমি নিজে একসময় এমন ছিলাম যখন দোয়া চাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতাম বেশী আর ইবাদত থাকত অনেকটাই অবহেলিত তাও দোয়া চাইতাম দুনিয়াবাদী সব দোয়া। আলহামদুলিল্লাহ্‌ এখন বুঝতে শিখেছি ইবাদত ও দোয়ার ক্ষেত্রে কিভাবে ব্যালেন্স করতে হয়। দোয়ার লিষ্ট তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন দুনিয়ার জন্য, আখিরাতের জন্য এবং আমাদের পারষ্পারিক সম্পর্কের জন্য। অনেকেই হয়ত ভাবছেন লিস্ট করার কি প্রয়োজন। প্রয়োজনটা আমি আমার নিজের উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে পারি। প্রতি রামাদানেই এমন হয়, অনেক কিছু আল্লাহর কাছে চাইব বলে ভেবে রাখি কিন্তু দেখা যায় আসল সময়ে (দোয়া কবুলের সময়) ভুলে যাই। তাই লিস্ট করে রাখব আর দু’একদিন পর পর তা দেখে নিজেকে Reminder দিব। দুনিয়ার জন্য তো অনেক কিছুই চাওয়া যায়, তাই এই নিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে বরং দেখা যাক আখিরাতের জন্য কি চাওয়া যায়। যেমনঃ ঈমান বৃদ্ধির দোয়া, কথা, কাজে, মনে, আত্মায় সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোয়া, কুরআন বোঝার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা, ইসলামকে বোঝার দোয়া, শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তির দোয়া, কবরের আযাব থেকে মুক্তির দোয়া, সবসময় সব কাজে আল্লাহর উপর ভরসা করতে পারার দোয়া ইত্যাদি। নিজের জীবিত অথবা মৃত বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনের জন্য দোয়া চাইতে পারি। আর পারি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে। আসলে চাওয়ার কোন শেষ যেমন নেই ঠিক তেমনি আল্লাহর কাছে চাইতে কার্পণ্য করারও কিছু নেই। কারণ আল্লাহর কাছে দেওয়ার জন্য কোন কিছুর কমতি নেই বরং আমরাই চাইতে পারিনা, এ আমাদেরই ব্যর্থতা। সম্পর্কের জন্য দোয়া এই ভাগটা দেখে নিশ্চয় অনেকের ভ্রু কুচঁকে গিয়েছে কি হতে পারে তা ভেবে। এই ক্ষেত্রে দোয়া হল আমাদের প্রতিদিনের যাপিত সম্পর্ক গুলো যাতে ইসলামের আলোকে সুন্দর ও মধুরভাবে টিকে থাকে সেই দোয়া। এই সম্পর্কের মধ্যে আছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, ভাই বোন সম্পর্ক, বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক, দ্বীনি ভাই বোনদের সাথে সম্পর্ক, নিজের অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি। আরও থাকবে উম্মাহর জন্য দোয়া। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার মুসলিম ভাই বোনদের দুঃখ দূর করার জন্য দোয়া অথবা তাদের ভাল থাকার জন্য দোয়া। ঠিক তেমনি যারা গোমরাহীতে আছে তাদের হেদায়াতের জন্য দোয়া। এমন হাজারো দোয়ার সাথে আমাদের মাথায় থাকতে হবে দোয়া কবুলের সময় জানার ব্যাপারে। দোয়া কবুলের ভাল সময় হল ইফতারের আগে, শেষ রাত, শুক্রবারের আসর আর মাগরিবের মাঝখানে আর রমজানের শেষ দশ দিন তো আছেই। আরেকটা কথা দোয়া করার পর আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব মূসা (আঃ) দোয়াটা পড়ার। তা হলঃ ৪) সামাজিক প্রস্তুতিঃ এবার আসি কি হবে আমার সামাজিক প্রস্তুতির লিস্ট সেই কথায়। শুরু করার আগে একটা হাদীস শেয়ার করতে চাই। রাসুল (সা:) বলেছেন “কোন ব্যাক্তির প্রতিটি ভালো কাজ দশ থেকে সাতশো গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। (মুসলিম) এর অর্থ হল আমি এই মাসে যেই ভাল কাজটা করব তার সওয়াব কত গুন পর্যন্ত হতে পারে তা আল্লাহই ভালো জানেন, আলহামদুলিল্লাহ্‌। তাই আমরা একটা লিস্ট তৈরি করব সামাজিক ভাবে কি কি ভালকাজ আমরা করতে পারি। যেই ভাল কাজটি হতে পারে মুসলিম কাউকে দেখে হেসে সালাম জানানো। সবচেয়ে ছোট সাদাকা হল হাসি আর যা দিতে আমাদের কোন কষ্টই করতে হয়না। আমরা অন্যকে ইফতারে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারি কিন্তু নিয়্যতটা হবে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি। কখনো নিয়্যত এমন হওয়া উচিত না যে ‘সামাজিকতা রক্ষা’, ‘লোক দেখানো’, ‘আমাকে দাওয়াত দিয়েছে তাই আমিও দিব’ এই ধরনের। আবার আমরা বিভিন্ন জনকল্যানমূলক কাজ করতে পারি। হয়তোবা খুব বড় করে না হোক ছোট হলেও আমরা চেষ্টা করতে পারি তা সম্পন্ন করার। আমরা সালামের অভ্যাস শুরু করতে পারি। আমাদের সমাজে একটা চলন আছে আর তা হল শুধু বড়দেরকেই সালাম দেওয়া বাকীদের নয়। কিন্তু সালাম হল এমন এক জিনিস যা এক মুসলিম অপর মুসলিমকে দেখলেই দিবে হোক সে বড়, ছোট অথবা সমবয়সী। আমরা চাইলে ছোট এক প্লেট খাবার নিয়ে মসজিদে চলে যেতে পারি ইফতার করতে যা আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়াবে। এছাড়াও বাচ্চাদের নিয়ে রামাদান বিষয়ক প্রোগ্রাম করতে পারি। মসজিদে তারাবীহ পড়তে যাওয়ার সময় মসজিদে আসা বাচ্চাদের জন্য কেন্ডি নিয়ে যেতে পারি। এভাবে আমরা যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী সামাজিক ভাল কাজের অথবা সুন্নাহর লিস্ট করতে পারি যা হয়ত আমাদের Reward অনেক গুন বাড়িয়ে দিতে পারে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক রামাদানের মাহাত্ম্য বুঝার এবং সেই অনুযায়ী আমল করার।
Reactions

Post a Comment

0 Comments